৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, সন্ধ্যা ৬:১৩

তারাও আওয়ামীলীগের নেতা

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা কর্তৃক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি, বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদে ক্রমেই ফুঁসে উঠছে জেলা-মহানগর আ.লীগসহ বিভিন্ন স্তরের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে উল্টো মুখে কুলুপ এটে নীরব ভুমিকা পালন করছে ৭ থানা আ.লীগের নব গঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দরাসহ জেলা-মহানগর আ.লীগের কতিপয় নেতৃবৃন্দরা, এমনটাই মনে করে রাজণৈতিক বিশ্লেষক মহল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, দীর্ঘ সময় পর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার ৭ থানার মধ্যে ৬ থানা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর আ.লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এসকল কমিটির নেতৃবৃন্দরা বিশালাকার মিছিল নিয়ে বেশ হাকডাক দিয়ে যোগদান করে থাকেন। এছাড়া নিজ নিজ এলাকায় দলীয় ও নিজস্ব সভা-সমাবেশ, কর্মসূচী-অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ জিউস পুকুর ইস্যুতে মহানগর আ.লীগের কতিপয় নেতাকর্মীও মেয়রের বিরুদ্ধে বেশ জোড়ালো বক্তব্য রাখেন। তবে এসকল নেতাকর্মীদেরকে দেখা যায় নি মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পাশে। যে কারনে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন উদ্বোধনী নাম ফলক ভাঙ্গার পড়েও টনক নড়েনি তাদের। কোন প্রতিবাদ কর্মসুচীতে যোগ দেননি বা নিজেরা কোন আন্দোলনেরও ডাক দেয়নি।

জানা যায়, দীর্ঘ সময় পর গত বছরের ১৫ জুলাই এড. শামসুল ইসলাম ভুইয়াকে আহ্বায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ১৬ জুলাই রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক ও রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ২২ জুলাই আড়াইহাজার থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন এম এ রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন কাজিমউদ্দিন। ৫ ডিসেম্বরে ডিক্রিরচর মাঠে সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে নাজির আহম্মেদ মাদবরকে সভাপতি ও আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, এই কমিটি গুলোর নেতৃবৃন্দরা প্রায় সকলেই দক্ষ ও পোড় খাওয়া রাজনীতিবীদ। তবে পোড় খাওয়া এ নেতৃবৃন্দরা আরেক পোড় খাওয়া নেতার দু:সময়ে পাশে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূলের এ নেতাকর্মীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ আনোয়ার হোসেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম এক স্তম্ভ। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের মাধ্যমে শুরু হওয়া বর্ষিয়ান এ নেতার হাত ধরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। ছিলেন প্রয়াত একেএম শামসুজ্জোহার শিষ্য, রাজনীতি করেছেন প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকা, প্রয়াত মফিজুল ইসলামসহ জেলার প্রায় সকল সিনিয়র রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে। সাংসদ সেলিম ওসমান থেকে শুরু করে সাংসদ শামীম ওসমানসহ অনেকেই রয়েছেন তার শিষ্যদের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে হলুদ পাখি বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। এমন সিনিয়র এক নেতার নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলায়ও যাদের কোনো কষ্ট লাগে না বা যারা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না তাদের দু:সময়েও তারা আ.লীগের কোনো নেতাকর্মীকে পাশে পাবে না বলে মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দুই দিন পর ৭ ডিসেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ফতুল্লা থানা আ.লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হন এম সাইফ উল্লাহ বাদল ও এম শওকত আলী। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়নি এখনো।

জেলা আ.লীগের এক নেতা জানান, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে আনোয়ার হোসেনের মতো অভিজ্ঞ এক রাজনীতিবীদের নামফলক ভাঙ্গার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছে জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। তবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন স্তরে আবার সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা বা তার গুরুর সমর্থক অনেক নেতাকর্মীও রয়েছেন। এসকল নেতাকর্মীদের বিরাট একটি অংশ নীরব ভুমিকা পালন করছে, যা কাম্য নয় বলেও মনে করেন তিনি। এতে, আওয়ামীলীগের তৃনমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.